|
ছবি: সংগ্রহীত |
চাঁদপুরের কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঘটে যাওয়া এক ন্যাক্কারজনক হামলার পর, গত কাল ২০ আগস্ট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম-বার, আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান। গত ০৪ আগস্ট চাঁদপুরে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন আয়োজন করে, যেখানে তারা কোটা ব্যবস্থার বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এ আন্দোলনটি হঠাৎ করেই সহিংসতায় রূপ নেয় যখন কিছু আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনের দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে। এ আক্রমণে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা ছিল গুরুতর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং আহতদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করে যে কোটা ব্যবস্থা তাদের জন্য বৈষম্যমূলক এবং এটি মেধার যথাযথ মূল্যায়নে বাধা সৃষ্টি করে। চাঁদপুরের শিক্ষার্থীরাও এই কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত ০৪ আগস্ট একটি আন্দোলনের আয়োজন করে। এই আন্দোলনটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের দুর্বৃত্তের কারণে পরিস্থিতি সহিংসতায় পরিণত হয়। দুর্বৃত্তরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর লাঠি, রড ইত্যাদি নিয়ে হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতরভাবে আহত হয়। আহত শিক্ষার্থীদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঘটনার কয়েকদিন পর গতকাল ২০ আগস্ট চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম-বার, আহতদের দেখতে শিক্ষার্থীদের বাসায় যান। তিনি আহত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এছাড়াও, তিনি আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপর এই ধরনের আক্রমণ আমাদের সমাজের নৈতিকতার অবক্ষয়ের পরিচায়ক। আমরা দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। দোষীরা যেই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনার পর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দ্রুত একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেন। এই দলটি আহত শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তারা নিরলসভাবে কাজ করছে।
পুলিশ সুপার আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আহত শিক্ষার্থীরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরতে পারে, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চাঁদপুরের সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন পুলিশের এই তৎপরতা এবং উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। তারা পুলিশের এই ধরনের পদক্ষেপকে একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করছে। পুলিশের তরফ থেকে আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি যে সহমর্মিতা প্রদর্শিত হয়েছে, তা সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। চাঁদপুরের কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম একটি মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই পদক্ষেপ চাঁদপুরের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করেছে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পুলিশের ভূমিকা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশের তরফ থেকে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।